নিয়ম মেনে করতে হবে শুটিং

হাওর বার্তাঃরাজধানীর উত্তরার শুটিংবাড়িগুলো গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। এ কারণে আশপাশের বাড়িগুলোতে বসবাসরত মানুষেরা ঘুমাতে পারেন না। অন্যদিকে রাতে কাজ করতে হয় বলে ঘুমাতে পারেন না শুটিংবাড়িগুলোর কর্মচারীরা। প্রতি মাসেই শুটিংবাড়ির এসব কর্মচারীর কেউ না কেউ চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। পাশাপাশি মালিকেরাও রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এ সমস্যা প্রায় এক যুগের। এসব আর চলতে দিতে চায় না শুটিংবাড়ি বা নাটকের সংগঠনগুলো। মধ্যরাতে আর শুটিং করতে দেবে না তারা।

বিষয়টি নিয়ে ডিরেক্টরস গিল্ড ও শিল্পী সমিতিতে একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও সমস্যার সমাধান হয়নি। উপায় না দেখে কঠিন পথ বেছে নিচ্ছে শুটিং হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এখন থেকে সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত শুটিংবাড়ি খোলা রাখবে তারা। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম বলেন, ‘আমরা আর পারছি না। বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী শুক্রবার সব সমিতিসহ ক্যামেরা, লাইট, প্রোডাকশনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিঠি পাঠাব। নভেম্বর মাস থেকে এই নিয়ম কার্যকর করা হবে।’

শুটিং হাউস মালিক সমিতির অভিযোগ, সারা বছর যে পরিমাণ নাটক হয়, তার ৪০ শতাংশের শুটিং হয় মধ্যরাত পর্যন্ত। শুটিংয়ের জন্য হাউসের আশপাশের বাসিন্দাদের অনেক অসুবিধা হয়। গভীর রাত পর্যন্ত শুটিংয়ের আলো, ইউনিটের হইচইয়ের কারণে তাঁরা ঘুমাতে পারেন না। শুধু হাউসের সমস্যা না, শুটিং ইউনিটের কর্মীরা প্রায়ই বিপদে পড়েন। বেশি রাত হলে তাঁরা বাসায় ফিরতে পারেন না। রাত দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত শুটিং চললে সবকিছু গুছিয়ে ঘুমাতে চারটা-পাঁচটা বেজে যায়। আবার সকাল সাতটায় শুটিং ইউনিট চলে আসে।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘শুটিং হাউসের আশপাশের বাসিন্দারা প্রায়ই হাউস বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। শুধু তা–ই নয়, ঘুমানোর সময় না পাওয়ায় অনেক শুটিং হাউসের কর্মচারীরা কাজ ছেড়ে চলে যান। ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচনের পরপর সভাপতি লাভলু ভাই ও সাধারণ সম্পাদক অলীক ভাই আমাদের কাছে এসেছিলেন। মৌখিকভাবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নিয়ম করে দিলেও সেটা আজও কার্যকর হয়নি।’

বসুন্ধরার ৩০০ ফুট, গাবতলী, আশুলিয়াতেও বেশ কিছু শুটিংবাড়ি রয়েছে। তবে উত্তরাকেন্দ্রিক শুটিংবাড়ির সংখ্যাই বেশি। প্রায় ১৫টি বাড়ি শুটিংয়ের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। শুটিংবাড়ির মালিক সমিতির নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, বছরের পর বছর এ ধরনের সমস্যার সমাধান না হওয়ার কারণে অনেক শুটিংবাড়ি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকগুলোর নতুন ঠিকানা হয়েছে। এমনকি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিমের দুটি হাউস বন্ধ হয়ে গেছে। আবদুল আলিম বলেন, ‘আমার নিজের আপন ঘর-৩ ও ৪ বন্ধ করে দিয়েছি। ব্যবসায় ক্ষতি হলেও কষ্ট করে চলব। তবু আমরা হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শুটিং ইউনিটের লোকজন যাতে সকাল-সকাল বাড়ি ফিরতে পারে, পরিবার-পরিজনকে সময় দিতে পারে, ভালোভাবে ঘুমাতে পারে, সেটাই চাই।’ তাঁর শুটিংবাড়ি ছাড়াও রাজ্য, বহুরূপী, শিশির, আশ্রয়, স্ক্রিপ্টসহ অনেকগুলো শুটিংবাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি, এটি অনিয়ম। দ্রুত নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। শিগগিরই আন্তসংগঠন একটি সমঝোতা চুক্তি করতে যাচ্ছি। চুক্তি স্বাক্ষরে এসবের বাইরেও শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজকসহ নাটকের সঙ্গে জড়িত সবার দায়িত্বগুলোও লিখিত আকারে থাকবে। কেউ নিয়ম না মানলে সাংগঠনিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা নাটককে ভালো একটি জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, সময়সীমার ব্যাপারে শুটিং হাউজগুলো একা একা সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। সব সংগঠন মিলেই সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হবে।
কিছুদিন আগেও এ প্রসঙ্গে অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেছিলেন, ‘কম বাজেটে নাটক বানানোর চেষ্টায় রাতব্যাপী শুটিং করেন অনেকে। আমাদের এখানকার কিছু সুপারস্টারও এসবে সম্পৃক্ত। এসব শিল্পীর অনেকে বেলা দেড়টা, দুইটা বা তিনটার আগে শুটিং সেটে যান না। অথচ অন্য শিল্পীরা সকাল থেকে বসে থাকেন। স্বভাবতই দেরিতে গেলে শুটিংও দেরিতে শেষ হয়।’

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর